বৃহস্পতিবার, ০৩ Jul ২০২৫, ০৮:১৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ কিডনির জটিল ও দূরারোগ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগের চিকিৎসা যেমন দীর্ঘমেয়াদী, তেমনি ব্যয়বহুল। ফলে অনেক রোগী আর্থিক সংকটে পড়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েন। সরকার দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের সহায়তায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল পরিচালিত ডায়ালাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন হাজারের উপরে রোগীদের জন্য এই অনুদান বরাদ্দ হলেও সেই টাকা ১ মাসেও হাতে পায়নি রোগীরা। টাকার চেক রোগীদের হাতে না-দিয়ে নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ দিচ্ছে একাধীক রোগীরা। এছাড়াও রোগীদের চিকিৎসা ব্যায়ও বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
রোগীদের চাপে পরে গত ২৬ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশে উল্লেখ করেন, যারা ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানের আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিয়েছেন, তারা ২৬ জুন ২০২৫ থেকে পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান পাবেন। এ অর্থ রোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা চেকের মাধ্যমে সরাসরি প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়।
অনুদানের টাকা হাতে পাওয়ার পর রোগীদের কৃতজ্ঞতা জানাতে বাধ্য করার পাশাপাশি ডায়ালাইসিস চার্জ দ্বিগুণ করা হচ্ছে। যেখানে আগের হিসেবে অনুযায়ী রোগীর খরচ ছিল ১৪শ টাকা, সেখানে এখন সেই বই অকার্যকর করে ‘আসল মূল্য’ অর্থাৎ ২,৫০০ টাকা প্রতি ডায়ালাইসিস ধার্য করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী অভিযোগ করেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অনুদানের টাকা দিয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে নানা শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। অনুদানের টাকার বিনিময়ে যেন জিম্মি করে ফেলা হচ্ছে রোগীদের।
রোগীরা বলছেন, “সরকারের অনুদান তো আমাদের চিকিৎসা সহজ করার কথা, কিন্তু এখানে সেই অনুদান নিয়েই আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আগে যেটা ১৪০০ টাকায় হতো, এখন সেটা করতে ২৫০০ টাকা লাগছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ডায়ালাইসিস এর পরিচালক ডা: বদরুল হক বলেন, আমাদের চেক সঙ্কটের কারণে রোগীদের হাতে অনুদানের চেক প্রদান করতে এই বিলম্ব হয়েছে। এছাড়াও রোগীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতেও কিছুটা সময় লাগছে।
বাড়তি ফি ধার্য করার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ভর্তুকী দিয়ে এই সেবা প্রদান করে আসছি কিন্তু বর্তমানে রোগীরা যেহেতু সরকারী অনুদান পেয়ে তাই তাদের জন্য আর ভর্তুকীর সুযোগ রাখছি না।”
অন্যদিকে সমাজসেবা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “অনুদানের টাকা দিয়ে রোগীকে হয়রানি করার কোনো এখতিয়ার হাসপাতালের নেই। এটা রোগীর সরাসরি সেবার জন্য বরাদ্দ। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রোগীদের দাবি, সরকারের এই মহতী উদ্যোগ যেন কিছু অসাধু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নিজেদের লাভের উৎসে পরিণত না করে, সেজন্য নজরদারি জরুরি। নয়তো ডায়ালাইসিস সেবার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাও নিরীহ রোগীদের জন্য হয়ে উঠবে আরেক দুঃস্বপ্ন।